চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যৌতুকের জন্য স্ত্রী’কে হত্যা ও লাশ গুমের অপরাধে হত্যাকারী ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদ (৫০)’কে দীর্ঘ ১৪ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
**********************************************
বাংলাদেশ আমার অহংকার এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম কলি আক্তার বরগুনা জেলার তালতলী থানাধীন নিদ্রারচর এলাকার বাসিন্দা। সে গত ২০০২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামে এসে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করে আসছিল। চাকুরী করাকালীন আসামী মামুনুর রশীদ এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং ভিকটিম তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত ২০০৫ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার তাদের বিবাহের বিষয়টি মেনে নেয়। বিবাহের পর থেকে ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুক দাবী করে এসেছে। ভিকটিম কলি আক্তার এর পিতা-মাতা অনেক কষ্টে ধার-দেনা করে মেয়ের সুখের আশায় সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ঘাতক স্বামীকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেয়। উক্ত টাকা দিয়ে ঘাতক স্বামী উশৃঙ্খল জীবন যাপন করিয়া নষ্ট করে ফেলে। তাদের ঘরে একটি ৩ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদ ডাকাতিসহ বিভিন্ন ফৌজদারী মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকে। ভিকটিমের পিতা-মাতা মেয়ের সুখের জন্য ঋণ করে ভিকটিমের স্বামী মামুনুর রশীদকে ১ বছর ০৮ মাস পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত করে। জামিনে মুক্ত হয়ে কর্মহীন অবস্থায় আরো ৫০ হাজার টাকার জন্য ভিকটিম এবং তার পরিবারকে চাপ দেয়। ভিকটিমের পরিবার চাহিদাকৃত ৫০ হাজার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামী মামুনুর রশীদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা ভিকটিমকে মারধর ও নির্যাতন শুরু করে। ভিকটিম তার স্বামীকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে প্রায়ই তার স্বামী তাকে গালাগালি, নির্যাতন এবং মেরে ফেলার হুমকি দিত।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ মে ২০০৯ইং তারিখে বিকাল আনুমানিক ১৫০০ ঘটিকায় ভিকটিমের মা ফোন করে ভিকটিম কলি আক্তারের খবর জানতে চাইলে ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদ জানায় ভিকটিম কলি আক্তার ডায়রিয়ায় আক্তান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর ঘাতক মামুনুর রশীদ মোবাইল ফোনে ভিকটিমের মা’কে জানায় তার মেয়ে ভিকটিম কলি আক্তার ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এবং দাফন-কাফনও শেষ। নিহত ভিকটিম কলি আক্তারের পিতা-মাতাকে না জানিয়ে দাফন করার কারন জিজ্ঞাসা করলে ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদ কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে ভিকটিমের পরিবার আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে যৌতুকের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ভিকটিম কলি আক্তারকে অমানুষিক নির্যাতন করে গত ২৬ মে ২০০৯ তারিখে হত্যা করে এবং হত্যার আলামত গোপন করার জন্য তাড়াহুড়া করে কাউকে না জানিয়ে দাফন করে ফেলে।
উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানায় ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদকে ১নং আসামী করে সঙ্গীয় আরো ০৮ জন নামীয় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-০২(১১)০৯, ধারা- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোদন-০৩) এর ১১(ক)/৩০ তৎসহ পেনাল কোড ২০১।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গৃহবধু কলি আক্তার হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী ঘাতক স্বামী মামুনুর রশীদ চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ব্রীজঘাট এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২০ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামী মামুনুর রশীদ @ মামুন@ ভূইয়া (৫০), পিতা- আব্দুল শুক্কুর, সাং- কৈখাইন, থানা-আনোয়ারা, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ১নং পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply