সাভার প্রেসক্লাব থেকে আওয়ামী দোসরদের বহিষ্কার করে সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকরা
সোহেল রানা
হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসান এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি আওয়ামী দুঃশাসনের সহযোগী সাংবাদিকরা নিজেদেরকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছেন। কিন্তু সাভারের কতিপয় আওয়ামী দোসর সাংবাদিক এখনো দাপট দেখানোর পাঁয়তারা করছে। বিশেষ করে দীর্ঘ প্রায় একযুগ প্রেসক্লাবকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা ব্যক্তিরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও পেশাদার সাংবাদিকদের ওপর খবরদারির অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এমতাবস্থায় দীর্ঘদিন সদস্যপদ বঞ্চিত সাংবাদিকরা এ সকল মুখচেনা দালাল সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে। তারা নিয়মিত প্রেসক্লাবের কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে নজর রাখছেন। নিজেদের অভ্যন্তরীণ আলোচনার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া তুলে ধরছেন। সাভার প্রেসক্লাব থেকে আওয়ামী দোসরদের বহিষ্কার করে সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন পেশাদার সাংবাদিকরা। যদিও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কয়েকজন বাদে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে নির্বাহী কমিটিতে। এটি সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন নয় বলে মনে করছেন পেশাদার সাংবাদিকরা।
সিনিয়র কয়েকজন সদস্য বঞ্চিতসহ একাধিক সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে“সাভারে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা দীর্ঘদিন নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পেশাগত কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছে। সত্য প্রকাশ করতে গেলে কণ্ঠরোধ করা হয়েছে, কয়েকজন সাংবাদিককে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। শারীরিক এবং মানসিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা ও কথিত চাঁদাবাজি নামের কালো আইন দ্বারা কয়েকজন সাংবাদিককে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সেই সরকারের পতনের পর সবাই প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর সাভার প্রেসক্লাবও স্বৈরাচারমুক্ত হয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের হাতে আশার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি যে, আওয়ামী দুঃশাসনের সুবিধাভোগী কতিপয় সদস্য এখনো প্রেসক্লাবে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিয়মিত খবরদারি চালাচ্ছেন। অতীতের ন্যায় সম্ভাব্য আগামীর জনপ্রতিনিধি হবেন এমন ব্যক্তিদের তোষামোদ করে নিজের চেয়ার ঠিক রাখতে চাইছেন এসব কালপিটরা। তবে এতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা রাখারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বৈষম্যের শিকার সাংবাদিকরা।
তাদের ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনুদান গ্রহণ করে কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি প্রেসক্লাবে সারাক্ষণ বসে পতিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলেছে।
অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পদের দায়িত্ব বন্টন করে নিয়েছেন এসব বাটপাররা। প্রেসক্লাবের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য এক্ষুণি সেই সব ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এখন স্বৈরাচার সরকার নেই। সঙ্গত কারণে আওয়ামী লীগের দালালদের সমীহ করার কোনো প্রয়োজন আমরা দেখি না। তারা তাদের নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং চিহ্নিত দালাল এবং অর্থ লুটতরাজকারীদের সদস্যপদ বাতিল করে তাদেরকে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার জোর দাবি জানিয়েছে পেশাদার সাংবাদিকরা। সেইসঙ্গে পেশাদার সাংবাদিক যারা এখনো প্রেস ক্লাবের সদস্য হতে পারেননি তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সদস্যপদ প্রদানের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
অপরদিকে বিগত ১৬ বছর ধরে হাসিনা সরকারের দালাল সাংবাদিকদের কারণে অনেক সরকারি অফিস পেশাদার সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপন প্রদান করেননি। সেই সব অফিসগুলোতে প্রথম সারির বিবেচনাক্রম অনুসরণ করে প্রেসক্লাবের সদস্য কিংবা সদস্য নয় এমন পত্রিকার সাংবাদিকদের একটি তালিকা তৈরি করে প্রেসক্লাবের সিল-সাইন করে অফিসগুলোতে প্রেরণের অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যাতে এতদিন যারা সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা যেন পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞাপন পায়। সেইসঙ্গে সাভারের কিছু স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগসহ দলীয় সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র নিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকরা।
এসব আওয়ামী পন্থী সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল মাইক্রোতে স্টিকার লাগিয়ে অপকর্ম করে বেড়ায়। যার দায় সাংবাদিক সমাজের ওপর পড়ে।
উদ্যোগ নিয়ে সাভারে কর্মরত প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা হাতে নিতে হবে। তারপর পথে-ঘাটে স্টিকারধারী কার্ডধারীদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরিয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এতে আমাদের পেশার হারিয়ে যাওয়া মর্যাদা কিছুটা ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” পরিশেষে স্বৈরাচারের দোসর বাদে সাভার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন।
Leave a Reply