“বাংলার মাটি থেকে নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ: ইতিহাসের ফয়সালা”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশের আপামর ছাত্র জনতা, নির্যাতিত সাধারণ মানুষ ও ইসলামী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী নাগরিকদের দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রত্যাশার ফলস্বরূপ বাংলার মাটি থেকে নিষিদ্ধ হলো আওয়ামী লীগ ও তাদের সমস্ত কার্যক্রম। আল্লাহ তায়ালার ফয়সালায়, সত্যের বিজয় ঘটেছে অবশেষে।
দীর্ঘদিন ধরে একটি দল নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে দাবি করলেও, প্রকৃতপক্ষে সেই দাবির পেছনে ছিল ইতিহাস বিকৃতির নির্মম ষড়যন্ত্র। যারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের কৃতিত্বের মঞ্চ বানিয়ে রেখেছিল, তাদের প্রকৃত ভূমিকা নিয়ে আজ জনগণের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে। মেজর ডালিমসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য ও স্বাক্ষ্যেই উঠে এসেছে— কেন শেখ মুজিবুর রহমানকে যুদ্ধ শুরুর আগেই গ্রেফতার করে নিরাপদে রাখা হয়, এবং কেন স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো অন্যদের হাতে ছিল।
আওয়ামী লীগ বরাবরই জনগণের আবেগকে ‘স্বাধীনতার বড়ি’ খাইয়ে বিভ্রান্ত করেছে। প্রকৃত ইতিহাসকে গোপন করে, নিজেরাই তৈরি করেছে একতরফা বিজয়ের গাঁথা। অথচ আজ অবধি কোন নির্ভরযোগ্য নথি বা প্রমাণ নেই যেখানে দেখানো হয়েছে— স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগের নির্দিষ্ট অবদান কী ছিল, কোথায় কে কী করেছিল।
ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ শুধু ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে। বাংলাদেশ থেকে বারবার ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে, সীমান্ত হত্যায় নিশ্চুপ থেকেছে, অথচ দেশের জনগণ ইলিশ মাছ থেকে শুরু করে সার্বভৌমত্ব পর্যন্ত হারিয়েছে। ভারতীয় বাজারে সবচেয়ে বড় ইলিশ চলে গেছে, আর বাংলাদেশি জনগণ মৌসুমেও বঞ্চিত হয়েছে।
আর এক কঠিন বাস্তবতা হলো— ইসলামী শক্তিকে দমাতে বারবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামী ছাত্রশিবির-এর মতো আদর্শভিত্তিক সংগঠনগুলোকে। অথচ ইসলামী ছাত্রশিবির এমন একটি শিক্ষার্থী সংগঠন, যারা ছাত্রদের নৈতিকতা, সততা ও মানবিকতার আলোয় গড়ে তোলে। যাদের মেধা, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত।
আল্লাহ তায়ালা সময় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। সেই সত্য আজ স্পষ্ট হলো। ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের চাপে, শেষপর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের আইন উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে জানালেন— বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হওয়া নয়, এটি একটি ইতিহাসের ফয়সালা। বাংলার মাটি দাবি করছে:
জুলাইয়ের গণবিক্ষোভে নিহতদের বিচার
ভিডিয়ার বিদ্রোহে আর্মি অফিসারদের খুনিদের বিচার
শাপলা চত্বরে শহীদ হাজারো মাদ্রাসা ছাত্রের রক্তের প্রতিশোধ
এই দেশ কখনো ভুলে যাবে না— কীভাবে আওয়ামী লীগ রক্তে রঞ্জিত করেছে রাজপথ, দমন করেছে ধর্মপ্রাণ মানুষের কণ্ঠস্বর।
সর্বশেষ দাবি, এই নিষিদ্ধ দল যেন আর কখনো বাংলার মাটিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আমরা চাই সত্য ইতিহাস, চাই ন্যায়ের বিজয়, চাই একটি আদর্শভিত্তিক সমাজ— যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে নীতি, মেধা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে।
এই বিজয়, এই ঘৃণা, এই জাগরণ— আল্লাহর হুকুমেই এসেছে। এখন প্রয়োজন, সেই ফয়সালাকে রক্ষা করা।
লেখক: মো: জাহাঙ্গীর আলম, এলএল.বি
কবি ও সাংবাদিক, সম্পাদক – দৈনিক দেশের বার্তা ২৪
Leave a Reply