কুমিল্লার চান্দিনায় ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন, মূল ০২ জন আসামী গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার।
গত ০৯/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল ১৬:৩০ ঘটিকায় কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার মাইজখার ইউনিয়নের করতলা (ছাড়াগাও)গ্রামে রাজমিস্ত্রী মো: আরিফ হোসেন (৩০), পিতা- আলাই মিয়া, মাতা- আইছাতুন বেগম, সাং- সাতগাঁও, থানা- ছাতক, জেলা- সুনামগঞ্জ এর মৃতদেহ বস্তাবন্দী অর্ধগলিত অবস্থায় করতলা (ছাড়াগাও) গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের মাছের চাষকরা পুকুরে ভেসে আছে। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে চান্দিনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতপূর্বক ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লাা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
ঘটনাটি জানতে পেরে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার জনাব আব্দুল মান্নান বিপিএম বার মহোদয়ের নির্দেশনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দাউদকান্দি-চান্দিনার সার্কেল এএসপি এনায়েত কবীর সোয়েব এর নেতৃত্বে চান্দিনা থানা পুলিশের একটি চৌকস দল আলোচিত ও ক্লু-লেস রাজমিস্ত্রী আরিফ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও নিবিড় তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত আভিযানিক দলটি ঘটনাস্থলের আশপাশ পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ও নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং সন্দিগ্ধ আসামীদের চিহিৃত করতে সক্ষম হয়।
এরই সূত্রধরে গতকাল ১০ আগস্ট ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ১০:১০ ঘটিকায় উক্ত আভিযানিক দল কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানাধীন ওয়াহিদপুর এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে রাজমিস্ত্রী আরিফ হত্যাকান্ডের মূল ২ আসামি- ১। ফাতেমা বেগম (২৮), স্বামী- শুক্কুর আলী, পিতা- ইলিয়াছ আলী, সাং- গাবুর গাঁও ও ২। শুক্কুর আলী (৩০), পিতা- মৃত আব্দুল গফুর, সাং- ছত্রিশ কালীপুর (দক্ষিন পাড়া), উভয় থানা- ছাতক, জেলা সুনামগঞ্জদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, বিগত ১০ বছর পূর্বে ফাতেমা বেগম ও শুক্কুর আলীর মধ্যে বিবাহ হয়। তাদের সংসারে ০৪টি সন্তান রয়েছে। শুক্কুর আলী রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। কাজের সুবাদে শুক্কুর আলীর সাথে আরিফের প্রায় ২/৩ বছর পূর্বে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়। আরিফ শুক্কুরের বাড়িতে প্রায় আসা যাওয়া করত। একপর্যায়ে আরিফের সাথে শুক্কুরের স্ত্রী ফাতেমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত প্রায় ০১ মাস পূর্বে ফাতেমা আরিফের সাথে চলে আসে। সেখানে কুমিল্লা চান্দিনার বাসিন্দা কুলসুম বেগম, স্বামী মৃত আলী মিয়ার ভাড়া বাসায় উঠে। সেখানে গিয়ে ফাতেমা আরিফকে বিয়ের জন্য চাঁপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিছুদিন পার হওয়ার পর ফাতেমা একসময় বুঝতে পারে আরিফ তাকে বিবাহ করবে না। এতে ফাতেমা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাহার স্বামী শুক্কুরের সাথে পুনরায় যাওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে শুক্কুরের সাথে যোগাযোগ করে এবং গত ০৭/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ শুক্কুর ফাতেমাকে আনার জন্য আরিফের ভাড়াবাসায় যায়। ঐ সময় আরিফ বাসায় ছিল না। এসুযোগে ফাতেমা ও শুক্কুর আরিফকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরবর্তিতে ০৭/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাত আনুমানিক ২২:০০ ঘটিকায় আরিফ বাসায় আসলে শুক্কুর পরিকল্পনা মোতাবেক শুক্কুর আরিফের বাসার চৌকির নীচে লুকিয়ে থাকে। অতঃপর ০৮/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০২:০০ ঘটিকায় আরিফ ঘুমিয়ে পড়লে পূর্ব-পরিকল্পনা মোতাবেক শুক্কুর ও ফাতেমা মিলে একটি লোহার শাবল দিয়ে আরিফের মাথায় সজোরে আঘাত করে। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে এবং মুখমন্ডলে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তিতে মৃত আরিফের লাশ গুম করার লক্ষে শুক্কুর ও ফাতেমা মিলে আরিফের মৃত দেহকে একটা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে আরিফের ভাড়া বাসার পশ্চিম পাশে জনৈক গিয়াসউদ্দিনের মাছ চাষের পুকুরে ফেলে দিয়ে শুক্কুর ও ফাতেমা পালিয়ে যায়।
উক্ত ঘটনায় চান্দিনা থানায় নিহত ব্যাক্তির ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর- ০৬, তাং- ১০/০৮/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
Leave a Reply