রবিউল ইসলাম -আশুলিয়া প্রতিনিধি-আশুলিয়ায় কথিত শ্রমিকনেতা ইসমাইল হোসেন ঠান্ডুর বিরুদ্ধে প্রতারনা করে শ্রমিকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ,পুলিশের সহায়তায় টাকা ফেরত পেলো শ্রমিক।।
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় এক পোশাক শ্রমিককে পাওনাদি পরিশোধ না করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে শ্রমিক নেতাদের কাছে সহায়তার জন্য গেলে সেই শ্রমিক নেতারা কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে শ্রমিকের পাওনা ৩৫ হাজার টাকা আদায় করে। তবে শ্রমিককে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেরাই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী পোশাক শ্রমিক মোসা. মাহিয়া আর্নিকা। এর আগে সোমবার(১৪ আগস্ট) আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
ভুক্তভোগী শ্রমিক মাহিয়া আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার ইথিক্যাল গার্মেন্টস এর সুইং অপারেটর পদে কাজ করতেন। গত ১৪ জুন তাকে কারখানা থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত শ্রমিক নেতারা হলেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ঠান্ডু এবং জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার আশুলিয়া ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মানিক সরকার।
ভুক্তভোগী পোশাক শ্রমিক মাহিয়ার থানায় লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, কারখানা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৪০০ টাকা পাওনা পরিশোধ না করে মাহিয়াকে বের করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে ফেডারেশনের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তারা শ্রমিককে নিয়ে কারখানায় যায়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও নেতাদের সমঝোতায় ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে। তবে শ্রমিককে শুধু ২০ হাজার টাকা দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আবোল তাবোল বুঝিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেয়।
শ্রমিক মাহিয়া বলেন, আমি হিসাব করে দেখেছি আমি ১ লাখ ৬৪০০ টাকা পাব। কিন্তু শ্রমিক নেতা ঠান্ডু আমাকে প্রথমে হিসাব দেখিয়েছিল যে আমি নাকি ৯৭ হাজার টাকা পাব। পরে আমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করার চেষ্টা করে। আমার সন্দেহ হলে পরে আমি থানায় যাই। পুলিশ এ বিষয় নিয়ে ঠান্ডুকে ফোন দিলে ঠান্ডু ভাই লালন নামে এক শ্রমিক নেতার মাধ্যমে আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা ফেরত পাঠায়। আমি এখনো আরও টাকা পাব।
ইথিক্যাল গার্মেন্টসের প্রশাসনিক (মানবসম্পদ) কর্মকর্তা মো. বিল্লাল বলেন, শ্রমিক আমাদের কাছে মাত্র ১২শ টাকা পাওনা ছিল শ্রমিক ফেডারেশনের চাপে আমরা ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছি। ঠান্ডু ভাই এসে আমাদের প্রেশারে ফেলেছে। এইটা ওদের একটা বিশাল ব্যবসা আকারে হয়ে গেছে আরকি। শ্রমিক ফেডারেশনকে সরকার লাইসেন্স দিয়ে আমাদের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে।
১২শ টাকা পাওনা হলেও কেন ৩৫ হাজার টাকা দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, না হলে আমাদের আরএসসিতে দিয়ে দিবে, এই করবে, সেই করবে। আরএসসি (আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল) তে যদি ক্লেইম করে দেয়, আমাদের ব্যবসা বন্ধ। তাই চাপে পড়ে আমরা বাধ্য হয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শ্রমিক নেতা ইসমাইল হোসেন ঠান্ডু বলেন, এই শ্রমিকের অভিযোগ মানিকের কাছে ছিল। সমাধান করতে পারেনি দেখে আমার কাছে আসছে। পরে আমি মীমাংসা করে দিয়েছি। মানিকই ১৫ হাজার টাকা রেখে দিয়েছিল। পরে আবার ফেরত দিয়েছে।
জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার আশুলিয়া ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মানিক সরকার বলেন, আমার কাছেই অভিযোগ নিয়ে আসছিল মেয়ে, কিন্তু এইটা ডিল করছে ঠান্ডু ভাই। আমার কাছে ছবি তোলা আছে টাকা মালিকপক্ষ দিয়েছে শ্রমিককে। সেখানে ঠান্ডু ভাই উপস্থিত ছিল। আমি ব্যস্ত থাকায় ওইদিন যেতে পারিনি। ১৫ হাজার টাকা ঠান্ডু ভাই নিয়ে আসছিল। পরে সোমবার টাকাটা ফেরতও দেয়া হয়েছে। ঝামেলা শেষ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতার মানিকের ঘটনা এটি। আমাদের একজনও ছিল বলে জানতে পেরেছি। আমাদের প্যাড ব্যবহার করে টাকা লেনদেন হয়নি। আমি তদন্ত করে দেখব, আমাদের সংগঠনের ওই নেতার যদি দোষ খুঁজে পাওয়া যায় আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিব।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপুল হোসেন বলেন, শ্রমিকের অভিযোগ পেয়ে আমি কারখানায় গিয়েছি। সেখান থেকে জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষ নাকি ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে। পরে অভিযুক্ত ঠান্ডুর সাথে যোগাযোগ করলে ঠান্ডু স্বীকার করে। পরে শুনেছি ভুক্তভোগীকে বাকি টাকা ফেরত দিয়েছে শ্রমিক নেতা ঠান্ডু।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, শ্রমিকদের কাছ থেকে পয়সা নিয়েই তো শ্রমিক সংগঠন চলে। এটাই সংগঠনের সাংবিধানিক নিয়ম। কিন্তু শ্রমিককে ভুল বুঝিয়ে, ২ নাম্বারি করে তো টাকা আদায় করার সুযোগ নেই। এটা অন্যায়। এখন প্রচুর শ্রমিক সংগঠন। সেখানে প্রচুর আগাছাও তৈরী হয়েছে। আগাছা নির্মূল করার দায়িত্ব আমাদেরই। অনেক সময় কোন অপরাধ করলে নেতাকে হয়ত বহিঃষ্কার করা হয়। কিন্তু তখন তারা আবার নতুন সংগঠন তৈরি করে। এভাবে তো চলতে পারেনা।
Leave a Reply