কক্সবাজারে কলাতলীর রাজন কটেজে পর্যটক গণধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলার অন্যতম প্রধান আসামী হারবদল’কে জেলার রামু থানাধীন জোয়ারিনালা রাবার বাগান এলাকা র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার
গত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে কক্সবাজারের কলাতলীর কটেজ জোনে ঢাকা থেকে আগত এক পর্যটক জোরপূর্বক গণধর্ষণের শিকার হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ও তার তিন বান্ধবী ০৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। ভুক্তভোগীর বান্ধবীদের পূর্বপরিচিত এক লোকের সঙ্গে তারা এই ভ্রমণে আসেন। কক্সবাজার এসে তারা কলাতলী সড়কের সুগন্ধা পয়েন্টের হোটেল মেরিন প্লাজায় কক্ষ ভাড়া নেন। পরে ০৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগী ও তার এক বান্ধবী হোটেল থেকে বের হয়ে বীচে যাওয়ার সময় সুগন্ধা পয়েন্টে কাকঁড়া খাওয়ার জন্য যায় এবং পরবর্তীতে ফিরে যাওয়ার প্রাক্কালে হোটেল মেরিন প্লাজা ও সুগন্ধা রোডের মাঝামাঝি পৌঁছালে মামলায় বর্ণিত আসামীরা একটি অজ্ঞাত নাম্বারের অটোরিকশা যোগে এসে তাদের গতিরোধ করে। অতঃপর তাদের জোরপূর্বক অটোরিকশা করে রাজন কটেজে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে আটকে রাখে এবং ভুক্তভোগী পর্যটককে রাতভর পালাক্রমে গণধর্ষণ করে অভিযুক্তরা। পালাক্রমে গণধর্ষণ ফলে ভুক্তভোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ঘটনার পর দিন অর্থ্যাৎ ০৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টায় ওই দুই পর্যটককে বাস টার্মিনাল নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামগামী মারসা গাড়িতে তুলে দেয়। পরে বাস রামু পৌঁছালে বাদী অসুস্থ হয়ে বাস থেকে নেমে গেলেও অপরজন কক্সবাজার ত্যাগ করেন। এরপর ভুক্তভোগী রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। পরে রামু হাসপাতালের চিকিৎসকরা পুলিশকে খবর দেয় এবং পুলিশ ওই কিশোরীকে হেফাজতে নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জোরপূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ ও সহায়তা করায় উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ০৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা ০২ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯ (৩)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত একজনের নাম পরিচয় তিনি দিতে পারলেও অন্য ০৪ জনের মধ্যে ০২ জনের শুধু নাম বলতে পারেন এবং অন্য ২ জনের কোনো পরিচয় তিনি দিতে পারেননি।
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এবং স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বর্ণিত ঘটনার পরপরই র্যাব-১৫ এর সম্মানিত অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন, এসজিপি, পিপিএম, পিএসসি, পদাতিক মহোদয়ের নির্দেশে পলাতক অভিযুক্ত ধর্ষকদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও তাদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে মাঠে নামে র্যাব। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে র্যাব নিশ্চিত হতে পারে যে, মামলার এজাহারে উল্লিখিত ২নং আসামী হারবদল এর নাম প্রকৃতপক্ষে মোঃ মনিরুল ইসলাম (৩৫)। র্যাব আরো জানতে পারে, মো. মনিরুল ইসলাম ওরফে হারবদল কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন গোনারপাড়া এলাকার মোঃ নূর আহম্মদের পুত্র। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ বিকাল অনুমান ১৭.০০ ঘটিকায় র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি চৌকস আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার রামু থানাধীন রাবার বাগান এলাকার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এবং আসামী মনিরুল ইসলাম ওরফে হারবদলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।গ্রেফতারকৃত আসামীর বিস্তারিত পরিচয় মোঃ মনিরুল ইসলাম ওরফে হারবদল (৩৫), পিতা-মোঃ নূর আহম্মদ, মাতা-মোছাম্মৎ মালেকা, সাং-গোনারপাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, থানা-কক্সবাজার সদর, জেলা-কক্সবাজার বলে জানা যায়। জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত ব্যক্তি উল্লিখিত তারিখ ও সময়ে গণধর্ষণ করার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply