গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরির চাওয়া পাওয়ার আমার জানা সংক্ষিপ্ত তথ্য এবং সাথে থাকা
আল কামরান
১৯৯৪ সাল হেলপার মজুরি ৯৩০ টাকা তা ছিলো কাগজে কলমে বাস্তবায়ন করতে পারিনি ততকালীন সময়ের এই কাজে জড়িত ছিলেন যারা,
এ কারনেই এই কথা বললাম আমি যখন ২০০১ সাল কারখানায় কাজে যোগদান করলাম ততকালীন সময়ে হেলপার বেতন ছিলো ৬০০/৭০০ /৮০০ টাকা এতেই বুঝা যায় ওই মজুরি ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি বা করতে পারিনি,
২০০৫সাল আমি ম্যাগপাই সোয়েটার জিরাবো তে কাজ করি কাজ করা অবস্থায় স্প্রেকট্রাম ধসে পড়া দেখে শ্রমিক সংগঠনে যোগদান করার আগ্রহ জাগে এবং ৫০ টাকা সদস্য ফিঃ দিয়ে স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনে সদস্য হয়ে যাই,
২০০৬ সালে আশুলিয়ার ম্যাগপাইয়ে কাজ করা অবস্থায় আঞ্চলিক নেতৃত্বে হাল ধরি শুরু হয় হেলপার বেতন ৩০০০ টাকার দাবিতে আন্দোলন প্রিয় নেত্রী শামীম আপা এবং প্রিয় নেতা আজাদ ভাই সাহস দেন অনেক আন্দোলন এবং পোশাক শ্রমিক নেতাদের জেল জলুম এবং শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে সামান্যতম বেতন বেড়ে হেলপার বেতন হয় ১৬৬২ টাকা
মনে রাখা জরুরী যে ১৯৯৪ বেগম খালেদা জিয়া সরকার ২০০৬ বেগম খালেদা জিয়া সরকার ২০০৬ সালে শ্রম মন্ত্রী ছিলেন আমানুল্লাহ আমান এ কারনেই মনে করতে বললাম যে তারাও সরকার ছিলো কিন্তু ভালো মজুরি ছিলোনা ১২ বছরে এক দিকে আগের মজুরি বাস্তবায়ন না হলেও আরো একটা মজুরির ঘোষণা আসে সমকাল ১২ টি বছর
সে সময় পোশাক শিল্পে ভরা যৌবন ছিলো, যৌবনেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি,
মাত্র ৭৩০ টাকা বৃদ্ধি হয়ে যখন ২০০৬ সালে ১৬৬২ টাকা হলো বা করলো সেই ইতিহাস কিন্তু আমি মনে রেখেছি এবং ততকালীন সময়ে শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার দেখেই শ্রমিকদের পক্ষে শুধু কথা নয় আশুলিয়া শ্রমিকরা আন্দোলন করে সারা দেশের শ্রমিকদের জন্য আইন সহ নানান কিছু পরিবর্তন এনেছে এবং পরিবর্তনে বাধ্য করেছে আমি এবং আমরা হুলিয়া হামলা মামলা জেল জুলুম রিমান্ড সব কিছুর শিকার হয়েই বারংবার মজুরির কথা বলেছি
আসলো ২০১০ সাল ২০০৬ থেকে ২০১০ সময়কাল চার বছর পুনরায় আশুলিয়ার শ্রমিকরা মজুরির দাবী ৫০০০ করলো মজুরি নির্ধারণ হলো ৩০০০ যেখানে আগেকার সরকার ১২ বছরে একবার মজুরি দিলো সেখানে বর্তমান সরকার চার বছরের মাথায় মুজুরি দিলেন সেখানেও আশুলিয়ার শ্রমিক ও আশুলিয়া শ্রমিক নেতাদের অংশগ্রহণ ছিলো বেশি,
২০১৩ সাল ২০১০ থেকে ২০১৩ সময়কাল মাত্র তিন বছর
তাজরিন ঘটনা এবং রানা প্লাজার ঘটনার রেষ ধরেই
সারা দেশের কোথায়ও সে সময় শ্রমিকরা মজুরির আন্দোলন করে নাই কিন্তু আশুলিয়ার শ্রমিকরা আন্দোলন সংঘটিত করলো দাবী করলো ৮০০০ হেলপার মজুরি নির্ধারণ হলো ৫৩০০ মজুরির ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়া হলো যাতায়াত এবং দুপুরে খাবার ভাতা নামক এক ভাতে এই ভাতা দেওয়ারও ইতিহাস আছে প্রতি বছর ছুটির টাকা পাওয়ারও ইতিহাস আছে যা আশুলিয়া শ্রমিকদের অবদান এবং শ্রমিক নেতৃত্বের অবদান
আগের মজুরিটা যেহেতু তিন বছরের মাথায় হয়েছে সেহেতু আশুলিয়া শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকরা এই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করলেন এবং শ্রমিক আন্দোলন শুরু করলেন কিন্তু সারা দেশের আর কোথাও কোনো এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন না করায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং নয়টি মামলা দেন এবং ৫ টি মামলা ৩ দিন করে মোট ১৫ রিমান্ডে নেওয়া হয় আমার সাথে সহযোদ্ধা আরো কয়েকজন নেতা ছিলেন এবং ৪০ জনের মত সে সময় শ্রমিক জেলে ছিলেন
আমি তাদের মজুরি আন্দোলনের মুক্তিযোদ্ধা মনে করি আসলে সে সময় শ্রমিকদের আন্দোলন আরো একটু সট টাইম করলে কিছু শ্রমিকদের জেলে যেতে হতোনা কিছু নেতারও জেলে যেতে হতোনা
অতন্ত্য দুঃখের বিষয় যে সে সময় আমরা যখন বিপদে পড়তে যাচ্ছি এটা শ্রমিকদের বলার পরেও তারা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলেন পরবর্তীতে আমরা জেলে গেলে দুই দিনের ভিতরে শ্রমিকরা সাদা কাগজে সাক্ষর দিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগদান করলেন এবং কয়েক হাজার শ্রমিক চাকুচুত্যি হয় এবং তাদের নামেও মামলা হয় ২০১৬ সাল দাবী করা হলো ১৫০০০/১৬০০০ দুঃখজনক যে আমরা সেই মজুরি পেলাম না,
আমরা পেলাম ২০১৮ সালে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদ কাল ৫ বছর জেল জলুমের শিকার হয়ে হেলপার মজুরি হলো ৮০০০ টাকা
এখন ২০১৩ সাল হলেও আমরা মজুরি বোর্ড এবং মজুরির দাবী করে আসছি আরো দুই বছর আগে হতেই বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন গুলো তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন এই আওয়াজ শ্রমিকদের কানে পৌছে দিতে,
যদিও অনেক সময় সভা সমাবেশ করে শ্রমিকদের সেখানে ডাকা হয়েছে সেই সভা সমাবেশে শ্রমিকেরা অংশগ্রহণ না করলেও মজুরি বোর্ডের চতুর্থ মিটিংয়ের পরে শ্রমিকরা আন্দোলন সংগঠিত করলো তবে সেই আন্দোলনে কিছু সহিংস লক্ষ করা গেলো এবং ২০১৬ সালের মত নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার মত অবস্থা চলে গেলেও আশুলিয়া শ্রমিকরা সঠিক সময়ের মধ্যে আবার কারখানায় ফিরে এসে কাজে যোগদান করেছে ইতিমধ্যেই তিনটি মামলা দেওয়া হয়েছে
অতএব সুশৃঙ্খল আন্দোলন সংগ্রাম হোক যৌবনে পিছিয়ে পড়া শ্রমিকগণ তারা পরবর্তীতে প্রজন্মে টিকিয়ে রাখতে আরো কৌশলী হোক,
রাজনৈতিক কর্মসূচি রাজনৈতিক নেতাদের ফাদা পাতে না পরুক আমাদের এই পোশাক শিল্প,
হাজার বছর আগের ইতিহাস শুনে ধর্ম পালন করি কিন্তু কিছুদিন আগের ঘটনা তা ভুলে গিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কথা শুনি,
আমরা যারা শ্রমিক যখন যে সরকার হবে তার কাছেই দাবী থাকবে জীবনমান পরিবর্তনে মজুরি বাড়াও, শ্রমিকদের সন্তানের শিক্ষা চিকিৎসা বাসসস্থেন নিশ্চিত কর
আমরা যারা বিভিন্ন দল করি দল ক্ষমতায় যাক এটা মনের একটা প্রশান্তি মাত্র,
আসলে আমাদের চিন্তা কেও করেনা এটাই সত্য,
যদি চিন্তা করতো তাহলে রেশন হতো আমাদের জন্য হাসপাতাল হতো আমাদের সন্তানের শিক্ষার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতো বাড়ি ভাড়া আইন কার্যকর হতো অথবা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কিস্তিতে শ্রমিকদের ফ্লাট হস্তান্তর করতো,,
সংসার না চললে বেতন বাড়ানোর কথা বলা ছাড়া উপায় নেই সুন্দর একটি মজুরি হোক এই প্রত্যাশা করি,
শ্রমিক ভাই বোনদেরও বলছি পূর্বের মজুরি নির্ধারণ এবং এর ইতিহাস জানো নিজে বুজো কারো কথা শুনার আগের নিজে দশবার ভাবো,
জয় হোক মেহনতি মানুষের দুনিয়ার মজদুর এক হও
Leave a Reply