ধামরাইয়ে ট্রিপল মার্ডার,
মেয়ের জামাইয়ের হাতে মা ও দুই ছেলে খুন
ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রামে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় মেয়ের জামাইকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা পিবিআই। গত ৪ জুন ২০২৫ তারিখ তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের রক্ষিত গ্রামে গত ০১/০৬/২০২৫ তারিখ রাত্রিতে ভিকটিম নার্গিস বেগম তার দুই ছেলেকে নিয়ে যথারীতি তার বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন অর্থাৎ ০২/০৬/২০২৫ তারিখ দুপুর ০২.০০ ঘটিকায় স্থানীয় লোকজন ও তাদের আত্নীয় স্বজন ভিকটিম নার্গিস বেগমসহ তার দুই ছেলের মরদেহ উদ্ধার করে। গত ০১/০৬/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার পর হতে ০২/০৬/২০২৫ ইং তারিখ দুপুর ০২.০০ ঘটিকার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামীরা ভিকটিম নার্গিস বেগমের বসত ঘরের টিনের বেড়ার দরজা খুলে সংগোপনে অনধিকার প্রবেশ করে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমদেরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ খাঁটের উপরে শুইয়ে রেখে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপার, পিবিআই, ঢাকা জেলার নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনার বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেন। এই ঘটনায় ভিকটিম নার্গিস বেগমের বড় ভাই মো: আব্দুর রশিদ ৪২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ধামরাই থানার মামলা নং- ০৫, তাং-০৪ জুন ২০২৫ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআইয়ের সিডিউলভুক্ত হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে।
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল এর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনায় এবং পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কুদরত-ই-খুদা, পিপিএম-সেবা এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/মোঃ মঞ্জুর রহমান মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/মোঃ মঞ্জুর রহমানের নেতৃত্বে পিবিআই ঢাকা জেলার তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তির ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষভাবে ভিকটিম নার্গিসের মেয়ের স্বামী সন্দিগ্ধ আসামী রবিন (২২), পিতা-মোঃ রফিকুল ইসলাম, মাতা-রেহেনা বেগম, সাং-কাউলীপাড়া (কামার পাড়া), থানা-ধামরাই, জেলা-ঢাকাকে গ্রেফতার করে।
তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সন্ধিগ্ধ আসামী রবিন (২২), তার শাশুড়ি ১। নার্গিস (৩৭), স্বামী-মৃত রাজা মিয়া এবং শ্যালকদ্বয় ২। শামীম (১৬), ৩। সোলাইমান (৬) উভয় পিতা-মৃত রাজা মিয়া, সর্ব সাং-রক্ষিত, থানা-ধামরাই, জেলা-ঢাকাদেরকে গত ০১/০৬/২০২৫ইং তারিখে দিবাগত রাত্র অনুমান ১১.৩০ ঘটিকা হতে ০২/০৬/২০২৫ ইং তারিখ ভোর ০৪.০০ ঘটিকা পর্যন্ত টিনের বেড়ার দরজা খুলে আসামী রবিন (২২) প্রথমে তার বড় শ্যালক শামীমকে পাশের একটি খাঁটে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার পাশে গিয়ে তার মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে সন্ধিগ্ধ আসামী রবিন তার শাশুড়ি নার্গিস (৩৭), তার ছোট শ্যালক সোলাইমানদ্বয়কে অপর একটি খাটে শুয়ে থাকাবস্থায় দেখে একই কায়দায় শাশুড়ি নার্গিস এর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং ছোট শ্যালক সোলাইমানকেও মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তিনজনের লাশ একই খাঁটে শুইয়ে রেখে কাঁথা দিয়ে ঢেকে ভোর অনুমান ০৪.০০ ঘটিকার সময় সন্ধিগ্ধ আসামী তার নিজ বাড়ীতে চলে আসে। তৎপরে ০২/০৬/২০২৫ইং তারিখ সকাল হতে সন্ধিগ্ধ আসামী রবিন এর স্ত্রী নাসরিন তার মা ও ভাইয়ের (ভিকটিমদের) ফোনে ফোন দিতে থাকলে তারা ফোন রিসিভ না করায় তার স্ত্রী তার মায়ের বাড়ীতে দুপুর অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় স্বশরীরে গিয়ে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান যে তার মা ও দুই ভাইকে মৃত অবস্থায় কাঁথা দিয়ে ঢাঁকা আছে। এ ঘটনায় সন্ধিগ্ধ আসামী রবিন (২২) কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে নিজেকে জড়িয়ে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে।
মূলত আসামী রবিনের শ্বশুর মৃত রাজা মিয়া গত এক বছর পূর্বে মৃত্যু রবণ করায় তার ডেকোরেশন এর ব্যবসা দেখাশুনা করাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহের জের ধরে আসামী রবিন এই হত্যাকান্ডটি ঘটায়। আসামীকে ফৌ: কা: বি: এর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনায় পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কুদরত-ই-খুদা, পিপিএম-সেবা বলেন,”পারিবারিক কলহের জের ধরে আসামী রবিন এই নৃসংশ হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে।
Leave a Reply