যেভাবে বিউটি পার্লারে খুন হয়েছেন টিকটকার রুবিনা
গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে টিকটকার বিউটিশিয়ান রুবিনা আক্তারকে (২৪) হাত-পা বেঁধে হত্যা করেছেন তারই স্বামী ও খালাতো ভাইসহ তিন জন। এ ঘটনায় এক নারী ও রুবিনার খালাতো ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে তার স্বামী পলাতক রয়েছেন। দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক বিরোধের জেরে বোরকা পরে পারলারে ঢুকে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেছেন অভিযুক্তরা।।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—জয়দেবপুর থানার খুদেবর্মী এলাকার সোমা রানি ঘোষ (৩০) ও সদর থানার আদাবৈ এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২২)। রাকিবুল নিহত রুবিনার খালাতো ভাই। রুবিনা আদাবৈ এলাকার আব্দুস ছালাম তালুকদারের মেয়ে। রবিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই এলাকার ‘রাজকন্যা বিউটি পারলার’ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। রুবিনার স্বামী মৃদুল ঘোষ সদর উজেলার জয়দেবপুর থানার খুদেবর্মী এলাকার নিতাই ঘোষের ছেলে।
সোমবার (০৫ জুন) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে দুই আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। একই দিন সকালে নিহতের মা সদর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন রিমান্ডে নেওয়া দুই আসামি।
সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেন বছরখানেক আগে মৃদুল ঘোষকে ভালোবেসে বিয়ে করেন রুবিনা। এটি রুবিনার তৃতীয় বিয়ে। বিয়ের দেনমোহর ২০ লাখ টাকা ধরা হয়। বিউটি পারলারের পাশাপাশি রুবিনা টিকটক ভিডিও বানাতেন। কয়েক মাস আগে অন্যজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। মৃদুল বিষয়টি জানতে পেরে জিজ্ঞাসা করলে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। এর জেরে মৃদুলকে ঘর থেকে বের করে দেন স্ত্রী। পরে দেনমোহরের ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মামলা করার কথা বলেন। এতে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মৃদুল। বিষয়টি খালাতো ভাই রাকিবুলকে জানান। কারণ রাকিবুলদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলছিল রুবিনার পরিবারের। এ সুযোগে হত্যায় সহযোগিতা করেন রাকিবুল।’
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘হত্যায় সহযোগিতা করার জন্য মৃদুলের কাছে এক জোড়া নুপুর ও তিন হাজার টাকা দাবি করেন রাকিবুল। পাশাপাশি হত্যায় সহযোগিতা করার জন্য সোমা রানিকে ভাড়া করেন। বিনিময়ে সোমাকে পাঁচ হাজার টাকা ও বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন মৃদুল। পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃদুল ও সোমাকে দুটি বোরকা সরবরাহ করেন রাকিবুল। রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ওই বোরকা পরে সোমা ও মৃদুল অটোরিকশায় চড়ে রুবিনার ‘রাজকন্যা বিউটি পারলারে’ যান। পারলারে ঢুকে রুবিনার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। সেইসঙ্গে তোয়ালে দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এ সময় বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দেন রাকিবুল। হত্যার পর মৃদুল ও সোমাকে মোটরসাইকেলে করে আমতলী এলাকায় পৌঁছে দেন রাকিবুল।’
হত্যাকাণ্ডের আগে ঘটনাস্থল রেকি করেছেন আসামিরা উল্লেখ করে ওসি আরও বলেন, ‘এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন তারা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে।’
Leave a Reply