জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থাকা অজ্ঞাতনামা নারীর চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার
ঘটনার বিবরণঃ গত ১১/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সন্ধা অনুমান ২০.০০ ঘটিকার দিকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা হতে রুহিতপুরগামী মেইন রোডের উত্তর পাশে পূর্বাশুরস্থ তমা কনস্ট্রাকশনের পরিত্যক্ত জমির জঙ্গলের ভিতরে অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ গলায় উড়না পেচানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল ও অফিসার ইনচার্জ, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের একটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং স্থানীয় জনগনের সহায়তায় অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহের সুরতহাল করে হত্যার প্রকৃত কারন নিরূপনের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) ঢাকায় ময়না তদন্তের জন্য প্রেরন করেন। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা নারীর চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত ১২/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা নং- ৩৮, তাং- ১২/০৬/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করে।
তদন্তঃ চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান, পিপিএম-বার, পুলিশ সুপার ঢাকা মহোদয় তাৎক্ষনিক নির্দেশ প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ অ্যান্ড ট্রাফিক-দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) অলক কুমার দে সহ কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার একটি চৌকষ তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক তদন্ত কার্য়ক্রম শুরু করে। পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের সহযোগিতায় অজ্ঞাতনামা মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় সনাক্ত করে। পরবর্তীতে পুলিশ ডিসিষ্টের নাম-পরিচয় পাওয়ার পর তার পরিবারকে উক্ত ঘটনার সংবাদ দেয়। তারপর তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। তদন্তের এক পর্যায়ে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও জনাব মামুনুর রশিদ পিপিএম, অফিসার ইনচার্জ, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) অলক কুমার দে এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে গত ১২/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ মধ্যরাতে নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম মাসদাইর থেকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৮)-কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সালমার সাথে শহিদুলের ০৭/০৮ বছরের পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার ০১ দিন আগে সালমা শহিদুলের গ্রামের বাড়ী বরিশালে যায় এবং সালমা জানতে পারে যে শহিদুল বিবাহিত এবং তার স্ত্রী বরিশালে গ্রামের বাড়ীতে থাকে। এ তথ্য জানার পর ভিকটিম সালমা তাৎক্ষণিকভাবে শহিদুলকে ফোন করে ১ম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সালমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। উল্লেখ্য যে, সামলা ডিভোর্সি এবং তার নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া একটি মেয়ে আছে। তারপর শহিদুল সালমাকে কৌশলে ঢাকায় আসতে বলে। ঢাকায় আসার পর শহিদুল সালমার সাথে ঘটনার দিন বিকেল ১৭.০০ ঘটিকার সময় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা করে। ঐদিন শহিদুল রাত ১০.০০ ঘটিকা পর ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সালমাকে কেরাণীগঞ্জে নিয়ে আসে। তারপর শহিদুল ঘটনাস্থলের জঙ্গলে নিয়ে প্রথমে সালমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে সালমার সাথে থাকা উড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। অতঃপর সালমার মৃতদেহ যাতে সনাক্ত করা না যায় সেজন্য পাশে থাকা ইটের টুকরা দিয়ে মুখ থেতলিয়ে চেহারা বিকৃত করে শহিদুল পালিয়ে যায়। হত্যাকান্ডের পর আসামী শহিদুল বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ায় যাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে না পারে। অবশেষে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা এলাকা হতে হত্যাকান্ডে জড়িত একমাত্র আসামী শহিদুলকে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।
মৃতের নাম-ঠিকানাঃ সালমা বেগম(৩৭), পিতা- আব্দুল খালেক শেখ, মাতা- দোলেনা বেগম, সাং- বি,কে মেইন রোড, ওয়ার্ড নং- ২৭, বাসা নং-৫৯, থানা- খুলনা সদর, কেএমপি।
আসামীর নাম-ঠিকানাঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম (৩৮), পিতা- শাহাজাহান মাতাব্বর, মাতা- মোসাঃ আয়েশা বেগম, সাং- হরিনাথপুর (নতুনপাড়া, মাতাব্বর বাড়ী, তৌফিকুর রহমান চেয়ারম্যানের বাড়ীর পশ্চিম পার্শ্বে), ৯ নং ওয়ার্ড, থানা- হিজলা, জেলা- বরিশাল, এ/পি- ২৭/১১/১ সিলেট বাড়ী, (নাজিম উদ্দিনের বাড়ীর ভাড়াটিয়), সেগুনবাগিচা, থানা-শাহবাগ, ডিএমপি, ঢাকা।
Leave a Reply