শেরপুর জেলা শ্রীবর্দী থানায় তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়ার চাঞ্চল্যকর মামলায় বিক্রয়কারী প্রেমিককে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪, সিপিসি-১, জামালপুর ক্যাম্প।*
*১. র্যাব-১৪, সিপিসি-১(জামালপুর)* ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার বিমান বন্দর থানাধীন দক্ষিণখান এলাকা হতে উক্ত মামলা আসামীকে গ্রেপ্তার করে।
*২. গ্রেপ্তার:*
ক। মোঃ লোকমান মিয়া (২৩)
*৩. নিম্নরূপ পুনরুদ্ধার:*
ক। মোবাইল ফোন -০১ টি (সীমসহ),
*৪. অন্যান্য তথ্য:*
ভিকটিমের বাবা-মা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। গত দুই বছর পূর্বে ভিকটিমকে ঝিনাইগাতী থানার পাইকুড়া গ্রামের মোঃ রেজ্জাক আলীর ছেলে মোঃ বিপ্লবের সঙ্গে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিবাহের পর থেকে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। সেই সুবাদে ভিকটিম এর বাবা-মা’র সঙ্গে ঢাকায় নিয়ে যায়। আসামী মোঃ লোকমান মিয়া (২৩), পিতা-মোঃ ইসমাইল হোসেন ওরফে ডাইয়া, সাং-চর শেরপুর নিপাড়া, থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর এর সাথে ভিকটিমের বাবা-মা’র সাথে একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে বিধায় তাদের পরিচিত। পরবর্তীতে তাদের বাসায় আসামী মোঃ লোকমান মিয়া (২৩) যাওয়া-আসা করিলে ভিকটিমের সহিত আসামীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং বিভিন্নভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলাইতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হলে ভিকটিমের বাবা-মা ভিকটিমকে তার নানার বাড়ী শ্রীবরদীর দক্ষিণ লঙ্গরপাড়ায় পাঠিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় মোঃ লোকমান মিয়া (২৩) অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোকের মারফতে ঠিকানা সংগ্রহ করে উক্ত গ্রামে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। অতঃপর বিষয়টি ভিকটিমের বাবা-মা জানতে পেয়ে আসামীকে ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে। ইহাতে আসামী মোঃ লোকমান মিয়া (২৩) ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০ জুন ২০২৩ ইং তারিখে রোজ মঙ্গলবার ভিকটিমের নানার বাড়ীর হাজির হয়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভনে ফুসলিয়ে ও বিভিন্ন প্রকার লোভলালসা দেখিয়ে অন্যত্র নিয়ে চলে যায়। উক্ত বিষয়টি একই গ্রামের মোছাঃ কুলসুম বেগম (৬০), স্বামী-মৃত দুলাল মিয়ার নিকট মোবাইল ফোনে জানতে পেরে মান সম্মানের ভয়ে এবং ভিকটিমের সংসার ভাঙ্গার ভয়ে কাউকে না জানিয়ে ভিকটিমকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে গত ০৫ আগস্ট ২০২৩ ইং তারিখে ভিকটিমের মায়ের মোবাইল ফোনে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ফোন আসে। ভিকটিমের মা ফোন রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ হতে আমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। ভিকটিমের মা ভিকটিমের কন্ঠস্বর চিনতে পেরে কোথায় আছে জানতে চাইলে ভিকটিম ঠিকানা বলতে পারেনি। পরবর্তীতে একই গ্রামের মোঃ লুৎফর রহমান (৪৫), পিতা-মোঃ আবুল হোসেন এর মারফত জানা যায় যে, আসামী মোঃ লোকমান মিয়া (২৩) ভিকটিমকে জামালপুর যৌনপল্লীতে বিক্রি করে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে শ্রীবরদী থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতেই জামালপুর যৌনপল্লী থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা মোছাঃ শোভা বেগম (৩৫), স্বামী মোঃ সুন্দর, সাং-দক্ষিণ লঙ্গরপাড়া, থানা-শ্রীবর্দী, জেলা-শেরপুর, থানায় হাজির হইয়া বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করলে অফিসার-ইন-চার্জ, শেরপুর শ্রীবর্দী থানার মামলা নং-১২/১৯৪, তারিখ-০৯/০৮/২০২৩ ইং, ধারা-মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ১০/১১ মানব পাচার মামলা রুজু করেন। উক্ত ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উক্ত ঘটনার পর থেকে আসামী গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে ছিল। এরই সূত্র ধরে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান এর নেতৃত্বে র্যাবের একটি আভিযানিক দল ঢাকা জেলার বিমান বন্দর থানাধীন দক্ষিণখান এলাকা হতে উক্ত মামলা আসামীকে গ্রেপ্তার করে। সূত্রোক্ত মামলা মোতাবেক ধৃত আসামীকে শেরপুর শ্রীবর্দী থানায় হস্থান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply