খবর পেয়ে ওই ফার্মেসী মালিকের কাছে জিম্মি অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধার করেছে সাভার মডেল থানার টহল পুলিশ। পরে ওই নারী পোশাক শ্রমিককে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওয়েট পেপারের আঘাতে রুবি খাতুনের চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে নেটিজেনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফার্মেসি মালিক আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
আহত রুবি খাতুন শরীয়তপুর জেলার সখীপুর থানার দুলারচর গ্রামের মোহাম্মদ ফয়সালের স্ত্রী। তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে মানিকগঞ্জ জেলার নয়াডিঙি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ধামরাইয়ের একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি করেন।
এ ঘটনায় রবিবার বিকেলে অভিযুক্ত বিসমিল্লাহ ফার্মেসির মালিক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে আহত নারী রুবি খাতুন সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকেলে বিসমিল্লাহ ফার্মেসিতে অসুস্থ শিশু সন্তান আব্দুল্লাহকে নিয়ে পোশাক শ্রমিক রুবি খাতুন, ননদ ফারজানা ও স্বামী ফয়সাল নষ্ট একটি থার্মোমিটার পরিবর্তন করতে আসেন। সেটি পরিবর্তন করে দিতে অস্বীকৃতি জানান ফার্মেসি মালিক আব্দুল মান্নান। পরে তারা নষ্ট থার্মোমিটারটি ফেলে রেখে ফার্মেসি থেকে বের হলে পেছন থেকে আব্দুল মান্নান তাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। ফিরে এসে প্রতিবাদ করলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পোশাক শ্রমিক রুবি খাতুনকে লক্ষ করে একটি শক্ত ওয়েট পেপার ছুড়ে মারেন ফার্মেসি মালিক আব্দুল মান্নান। এতে তাঁর চোখ ও কপাল আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এ সময় তার স্বামী ফয়সালকে লক্ষ করে চেয়ার ছুড়ে মারেন মার্মেসির মালিক। এরপর তাদের ওই ফার্মেসিতে আটকে রাখার চেষ্টা করেন মান্নান। পরে স্থানীয়দের খবরে থানা পুলিশের একটি টহল দল তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
আহত রুবি খাতুন বলেন, আমার দুই বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ঠান্ডা জ্বরে আক্রান্ত হয়। আমার ননদ ফারজানার মাধ্যমে বিসমিল্লাহ ফার্মেসী থেকে শুক্রবার ১২ এপ্রিল দুপুর ১২ টায় ওষুধসহ দুইটি থার্মো মিটার কিনে আনি। যার মূল্য ধরা হয় ৩৬০ টাকা। বাসায় নিয়ে আসার পর দেখি একটি থার্মোমিটার নষ্ট। পরদিন শনিবার ১৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫ টায় আমার ননতসহ আমি সেটা পরিবর্তন করতে গেলে ফার্মেসীর মালিক আব্দুল মান্নান সেটি পরিবর্তন করে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন। আমার স্বামী রিকশা থেকে বাচ্চাসহ নেমে সেটি ফেরত নেওয়ার অনুরোধ করলে তাকেও গালমন্দ করেন। এরপর আমরা থার্মোমিটারটি ফেলে রেখে চলে আসতে চাইলে পেছন থেকে আরো উত্তেজিত হয়ে গালমন্দ শুরু করেন আব্দুল মান্নান। আমার স্বামী এর প্রতিবাদ করলে ফার্মেসিতে থাকা একটি ওয়েট পেপার আমাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন। সেটি এসে আমার চোখে লাগে এবং আব্দুল মান্নানের বসার চেয়ারটি আমার স্বামীকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফার্মেসি মালিক আব্দুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছ থেকে দুইটি থার্মোমিটার তারা নিয়ে গেছিল। পরদিন তারা একটি পরিবর্তন করতে আসছিল। আমি তাদের জানাই দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে। আগে কোম্পানির সাথে আলোচনা করতে হবে এতে তারা উত্তেজিত হয়ে পরে। আমিও রাগ সামলাতে না পেরে আঘাত করে বসি। তারাও আমাকে আঘাত করে।
এ ব্যাপারে রবিবার রাতে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। চিকিৎসা শেষে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply